নিজস্ব প্রতিবেদন :
বান্দরবানের লামা উপজেলায় আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন মো. মিরাজ হোসেন নামের এক যুবক। পারিবারিক ও সামাজিক হতাশা থেকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে তিনি বুধবার এ স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। পরে লামা থানা পুলিশের মহতি উদ্যোগে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে আসেন মিরাজ হোসেন। মিরাজ হোসেন উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের চিংকুম ঝিরির পুলিশ ক্যাম্প পাড়ার বাসিন্দা মাওলানা মো. আমিন উল্লাহর ছেলে।
জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ধরে পারিবারিক বিষয় ও সামাজিক হতাশা থেকে মিরাজ হোসেন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করার জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
আমি আমার মৃত্যুর অঙ্গিকার করতেছি, আমি মো. মিরাজ। পিতা-মৃত মাওলানা মো. আমিন উল্লাহ, মাতা- মোছাম্মৎ ফরিদা বেগম। গ্রাম-চিংকুম ঝিরি, ইউনিয়ন- রুপসীপাড়া, থানা-লামা, পোষ্ট- ৪৬৪০, জেলা- বান্দরবান। আমি এই মর্মে অঙ্গিকার করতেছি যে, আমার মৃত্যুর জন্য আমিই একমাত্র দায়ি থাকবো। আমার কোনো আত্মীয় স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশী দায় থাকবেনা। আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও এক স্ত্রী আছে। এদের আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলাম। আমার চলার পথে অনেক বন্ধু ছিল। সকলের কাছে আমি মাফ চাই। আমি হাসি আনন্দে কস্টে অনেককে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমার কিছু ঋণ আছে। আমার মৃত্যুর পর আমার বাবার কিছু জমি আছে। তা আমার বড় ছোট তিনটি বোন আছে। রহিমা মুসলিমা ও মাহমুদা আক্তার মায়া, এদের ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে আমার অংশের জমিটুকু বিক্রি করে মৌচাকে ও কৃষি ব্যাংকে দিয়ে, যদি থাকে তাও আমার তিন বোনদেরকে দিয়ে দিবেন। এই অনুরোধ টুকু আমার এলাকার সচেতন মুরুব্বিদের কাছে, আল্লার দিকে তাকিয়ে একটু করবেন’। এ পোষ্টটি অবগত হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. ফরিদ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম মিরাজের বাড়িতে যায়। সেখানে মিরাজকে সান্তনা দেন এবং তার পারিবারিক সমস্যা সমাধানসহ পাশের থাকার আশ্বাস দেন পুলিশ। এতে মিরাজ হোসেন পুলিশের কাছে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে আসার অঙ্গিকার করেন।
এ বিষয়ে মিরাজ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে হতাশ হয়ে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। থানা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস এবং আমার ভুল ধরিয়ে দিলে আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসি। এজন্য লামা থানা পুলিশকে কৃতজ্ঞতা জানাই। বর্তমানে আমি ভালো আছি।
এদিকে রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চাছিংপ্রু মার্মা ও সদস্য মো. শাহ আলম জানান, তাৎক্ষনিকভাবে থানা পুলিশ উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ছেলেটি ভুল পথ থেকে ফিরে আসে। এ জন্য পুলিশ প্রশংসার দাবিদার।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আত্মহত্যা করার স্ট্যাটাসটি অবগত হওয়ার সাথে সাথে মিরাজ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলি এবং তার বাড়িতে পুলিশ পাঠাই। তার পারিবারিক বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি তার সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল সে বিষয়ে তাকে ব্যাপকভাবে বুঝানো হয়। এক পর্যায়ে ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে আর এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিবেনা বলে অঙ্গিকার করে মিরাজ হোসেন।
+ There are no comments
Add yours