খবর বাংলা ডেস্কঃ নিরাপদ পানির অভাবে প্রতিবছর বিশ্বে পানিবাহিত রোগে ১৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় ও ৮ লাখ ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রতি ৩ জন মানুষের মধ্যে ১ জন হেপাটাইটিস বি কিংবা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত । ২০১৫ সালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ লাখ লোক মারা গেছে। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমিত হলে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
আজ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অডিটরিয়ামে আয়োজিত জনগণের মধ্যে হেপাটাইটিস, পানিবাহিত রোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা প্রচারণার বিষয়ক অ্যাডভোকেসী সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর লাইফ স্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশনের সহযোগিতায় কনসালটিং ফার্ম বর্ণমালা কমিউনিকেশন লিমিটেড সভার আয়োজন করেন।
সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সভায় সভাপতিত্ব করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরর যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ।
জেলা স্বাস্থ্য তত্ত¡াবধায়ক সুজন বড়–য়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অ্যাডভোকেসী স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান, ডেপুটি চীফ (টিএসডি) এন্ড প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডবিøউএইচও) মোঃ মোখলেছুর রহমান, জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ সাঈদ হাসান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার, মেডিকেল অফিসার (প্যাথলজি) ডা. আবু সাদাত মোঃ শিহাবউদ্দিন, মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ নওশাদ খান ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ প্রমূখ।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য কর্মীরা অ্যাডভোকেসী সভায় অংশ নেন।
প্রবন্ধে বলা হয়-বিশ্বে ২০০ ধরণের ক্যান্সার রয়েছে যার কারণে প্রতিবছর লাখো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১২ সালে বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা গেছে। প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু সচেতনতা বুদ্ধি করা গেলে এসব জঠিল রোগ প্রতিরোধ সহজ হবে।
প্রবন্ধে ক্যান্সারের কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয় তার মধ্যে বয়স, খাবার, জীবনযাপন ধারা, পারিবারিক ইতিহাস, পরিবেশ ও পেশাগত কারণ অন্যতম। গবেষণার বরাত দিয়ে এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানির উৎসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশী মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মলের জীবাণু রয়েছে এমন উৎসের পানি পান করছে ৪১ শতাংশের বেশী মানুষ। এ ক্ষেত্রে স্বল্প শিক্ষিত নগরবাসী সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে। শহরাঞ্চলের এসব পরিবারে যে পানি খাওয়া হয় তার উল্লেখযোগ্য অংশে উচ্চমাত্রার ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকে – যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।
বিশেষজ্ঞ বক্তাগণ শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য, গৃহস্থালির আবর্জনা, কৃষিক্ষেত্র তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও খনিজ তেল, তাপীয় দূষণ, আর্সেনিক দূষণকে পানি দূষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
অতিথিগণ তাদের বক্তৃতায় বলেন, মরণ এ ব্যাধি প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা, সুষম খাবার গ্রহণ, আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করার ওপর ঝোর দেন। এছাড়া নিয়মিত হাঁটাচলা, ব্যায়াম, ভেজাল ও নি¤œমানের কসমেটিক পরিহার, দীর্ঘ সময় সরাসরি সূর্যের নীচে না থাকা, জীবানুর বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ, পরিবেশ দূষণ – বিশেষ করে বায়ু ও পানিদূষণ বন্ধ করার ওপর বক্তাগণ গুরুত্বারোপ করেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার ৭ উপায়ের কথা বলেছেন। এগুলো হলো-ফুটিনো, ফিল্টারিং, ক্লোরিন ট্যাবলেট বা বিøচিং পাউডার মেশানো, পটাশ বা ফিটকিরি মেশানো, সৌর পদ্ধতি, আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ও আয়োডিন ব্যবহার।
সভাপতির বক্তৃতায় সিভিল সার্জন বলেন, পানিবাহিত রোগ হেপাটাইটিস ও ক্যান্সার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি। নিরাপদ পানির অভাবে অসংখ্য মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। গত বছর নগরীর হালিশহর এলাকায় বিভিন্ন কারনে পানি দুষিত হয়। ফলে সেখানে হেপাটাইটিস, কলেরা ও ডায়রিয়াজনিত রোগ দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের নিরলস প্রচেষ্টায় তা মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সুস্থ্য থাকতে হলে পানি ফুটিয়ে পান করার পাশাপাশি রান্না-বান্না ও অন্যান্য কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
+ There are no comments
Add yours