বিপুল মিয়া,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি >>
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনিরাম (শাহবাজার)গ্রামের বাসিন্দা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মনতাজ আলী ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুর ১ টায় ইন্তেকাল করেছেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন কণ্যা ও এক ছেলে সন্তান রেখে গেছেন।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪ টায় এই মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যথাযথ রাস্ট্রীয় মর্যাদায় সশস্ত্র সালাম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
সশস্ত্র সালাম ও শ্রদ্ধা নিবেদনকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি রাজীব কুমার রায়, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবর রহমান ও ফুলবাড়ী থানা পুলিশের অন্যান্য সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা তাঁর স্মৃতিচারণ করে জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মনতাজ আলী পরিবারের খুব আদরের ছিলেন। তাঁর মা বাবা অনেকটা শখ করেই তরুণ মনতাজের বিয়ে দিয়ে পুত্র বধূকে বাড়ীতে আনেন। নববধূর হাতের মেহেদীর রং মুছতে না মুছতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন স্বাধীনতা যুদ্ধের।
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে নববধু আর বাবা-মাকে রেখে যুদ্ধে যোগদিতে বাড়ি ছাড়েন মনতাজ আলী। একই গ্রামের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারি তাঁর স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে রওনা হই।
বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদুর যাওয়ার পর পিছন থেকে ভাইজান ভাইজান বলে ডাক দিয়ে মনতাজ দৌড়ে আসলো। হাফাতে হাফাতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছি।
আমি বললাম যুদ্ধে। সে ও আমার সাথে যেতে চাইল। আমি তাকে বললাম সবে তোর বিয়ে হয়েছে বাড়িতে নতুন বউ রেখে যুদ্ধে যাবার দরকার নাই।
এই কথা শুনে সে বললো বউ কেন যদি দেশের জন্য জীবন দিতে হয় তাও দিব। আপনার পায়ে পড়ি ভাই আমাকেও সাথে নিয়ে যান।তার এমন দেশপ্রেম দেখে আমি তাকে সাথে নিয়ে যুদ্ধে যাই।
৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে ৯ মাসের যুদ্ধের পুরোটা সময় সে আমার সাথে থেকে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছে। সে বয়সে তরুণ হলেও অত্যন্ত সাহসী একজন যোদ্ধা ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের মতই জীবন যুদ্ধেও বউ বাচ্চাদের নিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়েছে এই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাকে। অনেক দিন ধরে নানান রোগে ভুগছিলেন তিনি।
অর্থাভাবে সুচিকিৎসার অভাবে শোকের মাসে তাঁর স্ত্রী,পুত্র-কন্যাসহ স্বজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।
+ There are no comments
Add yours