দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসেছে ইসলামী ঐক্যজোট। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নিয়ে ১১টি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী ঐকজোট।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন।
ইসালামী ঐক্যজোটের ১১ প্রস্তাব
১। কারো প্ররোচনায় নয়, বরং অন্তরের তাগিদেই অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বিবেকের আলোকে বিচার-বিবেচনার নিরিখে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকালে প্রার্থী ও ভোটাররা যাতে শ্বাসরুদ্ধকর এবং বিভীষিকাময় পরিস্থিতির অশুভ থাবায় আক্রান্ত না হয়, সেদিকে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নির্বাচনে অনৈতিকভাবে জেতার প্রয়াসকে যেকোন মূল্যে
প্রতিহত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
২। পোলিং বুথে সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের নির্ভয়ে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৩। প্রতিটি কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল জনসমক্ষে ঘোষণা করতে হবে এবং প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সার্টিফিকেট ইস্যু বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪। নির্বাচনের সময় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে স্পর্শকাতর এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সেনাবহিনী নিয়োগ করার প্রয়োজন নেই বলে ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সব প্রার্থীর নাম, দল ও প্রতীকের উল্লেখ সম্বলিত অভিন্ন পোস্টারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবে। নির্বাচনকালে প্রার্থীদের সব ধরনের রঙ্গিন পোস্টার, ব্যানার ও অহেতুক আঞ্চলিক অফিস স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৫। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত বিদ্যমান সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবেন। এমন কোনো পরিকল্পনা নিতে পারবেন না, যাতে ভোটাররা প্রভাবিত হতে পারে। ইসলামী ঐক্যজোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের আকৃতি সীমিতকরণের সুপারিশ করছে।
৬। নির্বাচনী বিরোধ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ার বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করে নির্বাচনী অভিযোগ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান করতে হবে। এর জন্যে হাইকোর্টে একটি পৃথক বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে।
৭। নির্বাচনকে কালো টাকা এবং পেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোট।
৮। নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দন্ডিত ব্যক্তিদের (দু’বছর পর) সংসদ নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ বাতিল করতে হবে।
৯। যে সব দল নির্বাচনে ৩০-এর অধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেবে, সেসব দলকে বেতার ও টিভিসহ সরকারী প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেওয়ার বর্তমান নিয়ম বহাল রাখা আবশ্যক।
১০। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাহার করার প্রস্থাব করছে ইসলামী ঐক্যজোট।
১১। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেই গ্রহণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিটি নির্ভুল নিখুঁত হওয়া আবশ্যক। প্রযুক্তির জগতে বাংলাদেশ সবেমাত্র প্রবেশ করেছে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে এখনো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। সুতরাং এ বিষয়ে প্রথমে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে বলে ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে। নির্বাচন কমিশনকে এক্ষেত্রে জনগণের শঙ্কা কাটানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে। ইসলামী ঐক্যজোট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ জনগণের এই শঙ্কা কাটানোর লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করে।
+ There are no comments
Add yours