‘এই হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন হেমন্ত ঋতুর। মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সোনালি হলুদপাতা, আর বাতাসে দুলছে কৃষকদের মন।
কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। হলুদ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। কেউ আবার আগাম ঘরে তুলছে সোনালি আমন ধান। তবুও নেই, নবান্ন উৎসব।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সোনালি ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন অনেক আমন চাষিরা। গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন।
এ নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক এক উৎসব। আশ্বিনের শেষে ও কার্তিকের শুরুতে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন। কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের স্বর্ণালি দিন।
বাংলাদেশে বর্তমান পালাগান আর বাউল গানের আসর বিলুপ্ত প্রায়। অপসংস্কৃতি, ফেসবুক, ইউটিউব ও ধর্মীয় প্রচারের নামে নারীদের ভোগপিপাসা অথবা পণ্যের সঙ্গে করা হচ্ছে তুলনা। আর তেমন চোখে পড়ে না, নবান্ন উৎসবের সেই নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন।
তবে বর্তমানে আমনের জায়গা দখল করেছে আউশ-বোরো ধান। বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান বাজারে আসায় নতুন ধানের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে ওইসব ধান উৎপন্ন হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐত্যিবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে বলেও মনে করেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি হয়েছে এবার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলায় রোপা আমন ধান কাটা শুরু করেছে। অনেকেই ধান ঘরে তুলেছেন। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় আমন ক্ষেতে গত বছরের থেকে এবার রোগবালাই কম। আমরা আশা করছি, কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাবে।
+ There are no comments
Add yours