রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরপর দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের বাবা-মা। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া শিশুদের নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। আগামী ২ মার্চ দুই বছরে পড়ত মুনতাহা মারিশা। আর ৩০ মে মুফতাউল মাশিয়ার বয়স হতো পাঁচ বছর।
এই দুই শিশুর বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে।
তবে তারা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন। কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন বাসার গৃহপরিচারিকা। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপরই তারা অসুস্থ হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। এর আগে গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। দু’জনেরই একই লক্ষ্মণ ছিল, জ্বর ও বমি। তাই শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তারা দুই মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে এই দম্পতি রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।
রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। তবে তাদের পাশাপাশি শয্যায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এ সময় সে বার বার পানি পান করছিল। এরপর দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরে অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার।
এদিকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাশিয়ার শরীরেও জ্বর আসে। একই সঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে জরুরিভাবে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে সঙ্গে সঙ্গেই আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে থাকা মাশিয়াও পরদিন শনিবার বিকেলে মারা যায়।
পলি খাতুন জানান, ছোট মেয়ে মারিশার মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কালশিটে উঠেছিল। আর বড় মেয়ে মাশিয়ারও একই রকম কালশিটে উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এমন দাগ তিনি আগে কখনও দেখেননি বলেও জানান।
আপাতত ওই দুই শিশুর বাবা-মা হাসপাতালের আইসোলেশনেই থাকবেন।
+ There are no comments
Add yours